বসন্ত ককটেল

দোলের চিঠি এসেছে যখন
সুতো বাঁধে আঙুলে আঙুল,
শীতেরাও আঁচলে গেঁথেছে
প্রতি রাতে ঝরে যাওয়া ভুল।

কত আলো, কত বলিরেখা
ভেজা থাকে জামার ভেতরে,
কমলাভ স্মৃতি-মেদুরতা
ফাগুনের উপকথা জুড়ে।

খয়েরি বুকেতে ফোটে সবুজ
ঋতু বদলায় মাটি চিনে,
নানা রঙ ভুরু সাজিয়েছ
ঠিকরোবে চোখ চিনে চিনে।

আলোতে আঁধার মেপে তুমি
মুখে লেপে নাও কিছু রঙ
বসন্তে হাওয়ারা বিদুষী
তার নখে লুকনো পেখম।

গন্ধেরও স্বরলিপি আছে
জোনাকি বিছিয়ে রাখে মন
আবিরে চুবিয়ে রাখা তারা
নীলে আঁকে আদর-রকম ।

পাতা জুড়ে যে সুর কুড়নো
ভাগ করে রেখেছিলে নাম,
যে আকাশ বুনে রেখে গেছ
তার রেণু বিলিয়ে দিলাম।

ফাগ জুড়ে ছোঁয়া খুঁজে ফেরা
রঙ দেবে চোখের আড়াল
হলুদে যে আগুন ওড়ালে
তার গালে ঘষে দেব লাল।

বেগুনি ফুটেছে জিভ জুড়ে
কথা ঘিরে ঠোঁটের জরিপ,
হাসিতে মাখানো জাদু ছেঁকে
জরি গাঁথা ছায়ার শরীর।


Advertisement

ভালোবাসার দিনগুলো সব

ভ্যালেন্টাইনের সপ্তাহ। ভালোবাসার আট দিন। তারিখের হাত ধরে ঝিলমিলিয়ে ওঠে দোকানের আলমারি, শপিং অ্যাপে জাম্বো-সাইজের কম্বো অফার। ভালোলাগা ফুটে ওঠে মনের উঠোনে। গোলাপ দিয়ে সমর্পণ, চকোলেট, টেডি’র ঘুষ পার করে প্রতিশ্রুতি, তারপর ‘সোহাগে-আদরে’ পৌছনো অন্তিম পর্বে। অতঃ কিম? ঘোড়ার ডিম? না, ‘শেষ বলে কিছু নেই’। হয়তো ফিরে যাওয়া দৈনন্দিন অভ্যেসে ভালোবাসার নকশা-বুনোটে। বা অভিযান সফল না হলে নতুন ঘুঁটি। লক্ষ্যও পাল্টে যেতে পারে।

তাহলে প্রথম দিন গোলাপ ভুলে গেলে বা রেস্তয় গাবদা টেডি না কুলোলে ডাহা ফেল? কখনোই নয়। ভালোবাসার সর সব সময়ই তারিখের ফ্রেম ছাপিয়ে চলকে ওঠে। নিবেদনের কোন বিশেষ লগ্ন নেই। সারা বছরই তো ‘দুই হাত প্রসারিত’ করে ‘নতজানু’ থাকার আর্জি। অভিমানের পর চকোলেট চালাচালিতেই ফিরে আসে অনুরাগ। পুতুল-পুতুল দিন টাঙানো থাকে টাইমলাইনে। সংজ্ঞা বদলায় সংকল্পের, পদ্ধতি পাল্টায় রাখার। চোখের তারায় ডুব দিলেই যেমন হীরে-মানিকের আলো, স্পর্শের ও কোন তিথি হয়না। আদরের জল সারা বছরই ভিজিয়ে রাখে সম্পর্কের সমীকরণ। তাই যখনই বলব ‘ভালোবাসি’, সন্ত ভ্যালেন্টাইন মৃদু হাসবেন।

কিন্তু জ্ঞানের এত বুলি বিলোলেও বিশেষ প্ল্যান কি হবে না? কেন নয়? ভালোবাসার সুযোগ পেলে সদ্ব্যবহার করে ফেলা যাক। মনে পড়ুক তার প্রিয় গোলাপের রং, চকোলেটের ব্র্যান্ড। রাতের ধূসর দীর্ঘ হলে জানলা খুলুক আলোর ঝাপটায়, অনিয়মের অজুহাতে। উপহারের খুশি পালক ওড়াক ছোঁয়াছুঁয়ির অলিগলিতে। আলনায় থাক পুরনো প্রমিস, নতুন রোদে কথা বোনা হোক। আর যা অনেক দিন বলার দরকার হয় না, উচ্চারিত হোক। চোখ থেকে ঠোঁটে নামুক প্রেমের অক্ষরমালা। আসলে ভালোবাসব বলেই এত অজুহাত, এত আয়োজন। সে দেবীপক্ষের অষ্টমী থেকে সরস্বতী পুজো পেরিয়ে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঘুরে নানা ছন্দের কোরিওগ্রাফিতে, সুরেলা রঙের রেখায় ভালোবাসার চিহ্ন রাখতে চাই। মুনফামুখর যুগে সবটাই হয়তো ব্যবসার ফিকির, তবুও অলস আঙুল বেঁকিয়ে কয়েক লাইন তো লিখিয়ে নিল, তাই বৃথা নয় কিছুই। তারিখেরা সাজিয়েছে উদযাপনের আলতা-ফড়িং, এবার মনের উড়ান নিজের নিজের মুঠোয়।

শব্দ(গুচ্ছ)ঋণঃ

১। ‘সোহাগে-আদরে’ – অনুপম রায়
২। ‘শেষ বলে কিছু নেই’ – অঞ্জন দত্ত
৩। ‘তোমারই সামনে নতজানু আমি দুই হাত প্রসারিত’ – চন্দ্রবিন্দু

বৈশাখ

বৈশাখ আগুন জ্বালাও
বাঁচিয়ে রেখো ঝলসানো লাল
মুকুল চিনুক কালচে দুপুর
একলা হওয়ার একাল-সেকাল ।

চামড়া চিনুক রোদের নরম
হাত ছুঁয়ে দিক ঘাম
পাতায় ফিরুক অপেক্ষারা
ঝলসানোর আরাম ।
এই গরমে পাথর গলুক
ভিজুক তোমার ঠোঁট
কালচে পায়ের পাতায় আনব
লালচে ভোরের স্রোত ।

 

Pic Courtesy : http://www.trekearth.com

জঙ্গলে মানুষে

অনেক জমিয়েছি কঙ্কাল, এবার শিকড়
ইতিহাস উল্টে দেখা অস্তিত্বের সফর
সাফারি হবে আমাজনে, গরুমারা জুড়ে
যাপন শেখাবে জঙ্গুলে আর চুক্তি মানুষের ।

পাড় ভাঙা , বাঁধ গড়া একই জোটে হবে
মাটি জল শুষে রেখে আগুন তাতাবে
পাথরে জন্ম নেবে আবার আগুন
সভ্যতা দেখে নেবে এগোনোর গুণ ।।

আলনা

এখনো রাখা আছে দুধসাদা চাদরে মোড়ানো
পৃথিবীর এককোণে জড়ো করা অবশেষ
বাকিটুকু ঘর নিয়েছে অন্দরমহলে
চাবিটা ঘোরালেই চৌকাঠ শেষ ।
 
কখনো থমকে ফিরে আসা ইতিহাস ছুঁয়ে
যাপন উল্টেপাল্টে অগোছালো রাস্তা
পাতার ভিড়ে অক্ষরের আলপথ
পালটে স্বপ্নে ধূসর সরানোর চেষ্টা ।
 
ক’টা দড়ি লিকলিকে লাঠি বেয়ে
পুরনো পাজামা বাঁচিয়েছে ,
যারা পারেনি ঝরে গেছে সোনালি দুপুরে
আর নতুন বার্নিশে পালক সাজিয়েছে ।
                                                            – ছবি সৌজন্যে ‘http://www.dreamstime.com’

শিকার

আবার রোদ-শেষের বেলায় জমছে মেঘ

চাপ রক্তে বাঁধা শরীর,

কখন ফুরোবে নিঃসাড় দাঁড়িয়ে থাকা ?

যখন বৃষ্টি নামবে শরীর-সমুদ্রে

অথবা জলের পোকারা উলের কোটরে

বাসা গড়ে থেকে যাবে,

কষটে নীল দাগটা ঠোঁটের এখনো শুকনো

লাল ওষুধ আসবে না ,

অঙ্ক কষা খুব সহজ , তবু উত্তর মেলে না ,

সময়ের শিকার বসন্তে প্রলাপ বকে

জামার হাতায় কাদা ভিজে কাঁপুনি লাগায় মেঘে,

সেই মেঘটা এসেছে আবার ,

ওইতো তারারা, ছিল তাহলে

স্বর্গের কাছাকাছি

একা মাঠে শুয়ে বেঁচে আছি

ফসলের খরা ধরবে শিকার ।

 

– pic courtesy : Wikipedia

Neerja

You’ve opened the door to traverse long distance

Responsibility doesn’t care bullets’ resistance

Your spirit set the Sun with the utility of time

Star-rays tell your stories on human timeline

 

Ashes will reach the banks which can offer bath

Every port and house seek Neerjas’ rebirth

Will not pray for you, can only work in memory

Prizes if named ‘Neerja’ can acknowledge bravery

ভ্যালেন্টাইনের আপেক্ষিতাবাক

টুটি টিপে ধরে প্রেম বসন্ত এসে গেছে

না আসেনি এখনো, তবে তার গায়ের গন্ধ আর চোখ-চলকানো প্রেম নিয়ে সরস্বতী পুজো হাজির । বাঙালির বসন্ত জাগ্রত দ্বারে, আবার ভ্যালেন্টাইন’স ডে তার ঘাড়ে । এত প্রেমের চাপে ঘাড় তোলাই কঠিন ।

এই দিনে আবার পুজোর অষ্টমীর পাঞ্জাবীটা ইস্ত্রি করে আয়নায় কার্তিক সাজার চেষ্টা, সেই কবেকার অভ্যেসে পুরনো সময়ের আরাধনা-কেন্দ্র গার্লস স্কুলের সামনে টহল দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা, আর পাশের বাইকে হুশ করে ক্লাস টেনে পটানো রাহী’কে নিয়ে আই.টি. আইকন কেষ্টা , সবমিলিয়ে সিঙ্গল হৃদয়ের মিঙ্গল করার বাসনায় এক জগ ওল্ড-মংক । সেই স্কুল-লাইফের শুরু থেকে যে জিভ লকলকে ভাবটা, তাতে আর ফ্রেঞ্চ-কিস জোটার সৌভাগ্য বোধহয় কুষ্ঠিতে নেই ; ক্যলেন্ডারের স্ক্রীনে চুমু-চুমু গন্ধ, আর এদিকে AXE’র শিশি খালি করেও খরা পিচ ।

এবার তো আবার সরস্বতী পুজো আর ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র জংশন । তাতে আর কি! পরপর দু’দিন দুঃখের বরফ বুকে বয়ে অফিস যাওয়া আর বসের ঝাড় হজম, বড়জোর ফেসবুকে গবেষণার পর দুটো প্রোফাইলে বন্ধুত্বের , থুড়ি তোমাকে চাই-এর কাতর অনুরোধজ্ঞাপন । তারপর ও তে সেই বিরহ-বিক্ষুব্ধের সারস্বত ভ্যালিতে ।

কিন্তু, এরকম কটা ক্যরিয়ার-ছাড়া সাইকেল চলে বলে শহরে কি প্রেম মারা গেছে নাকি ! কক্ষনো না ।। ডাচ গোলাপ ,লাল গোলাপ এর কাটতি বিরাট কোহলি’র স্ট্রাইক রেট কে পাঁচ গোল দেবে ; প্রথম দিন শহরের রং বাসন্তী , তো পরের দিন লাল (সেটা অবশ্যই বামপন্থীদের নস্তালজিক করা ছাড়া আর কোন মনোবল দেবে না) ; একটা ছুঁতো , একটু ছোঁয়া , প্রতিদিন যা বলা বা করা হয়ে ওঠে না, সেটার জন্যই একটা দিন শ্বাস নেওয়া , গায়ে গা ঘষে বেঁচে নেওয়া আগামীর উপজীব্য । কাঠের দুল চুইয়ে যে দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্যই জন্মেছিলো , তাকে পাঞ্জাবীর বোতামে গেঁথে নেওয়া , কানের কাছে আলতো ঠোঁট আটকে আরও একবার শপথ নেওয়া , ‘ভালবাসি’ । ওটুকুই চশমার ফ্রেমে বাঁধানো থাক, গুগল গ্লাসে দিন এগোক না !

কবিতা – কোলবালিশ

যেখান থেকে শুরু করি সেইখানে এসে শেষ

গাছের পাতায় শব্দ রাখা হাওয়াদের অভ্যেস ,

নরম ছায়ায় হাল্কা আগুন সলতে পাবে না

ধূপকাঠিদের গন্ধে জেনো মাটি ঘুরবে না

জীবন যেন অক্ষর গোনার কল …

দিন কেমন – তুমি ও সচেতন,

রাগ ভীষণ – অভিমানী আস্তরণ ,

ঝরবে লাল পাথর ধূসর অন্তরে

ভাঙবে তার নালিশ – কোলবালিশ ।।

 

চোখের কাজল মিলিয়ে যাবে , স্পর্শ সরবে দূর

গল্পে চেনা শব্দগুলো ঠোঁটে কাটবে সুর ,

সময় যখন মজুর নেবে দলে ভিড়ছি না

রক্ত যখন বাষ্প চাইছে তোষক ছাড়ছি না

নরম এখন আমার হাতে নেই ,

দিন কেমন – ছিলে কি সচেতন,

রাগ ভীষণ – অভিমানী আস্তরণ ,

চলবে তুষারপাত ভগ্ন অন্তরে

জুড়বে তার নালিশ – কোলবালিশ ।।

(সুর – অনুপম রায়’র ‘তিস্তান ২’ গানের অনুকরণ )